‘বিতর্কমুক্ত’ কমিটি নিয়েও বিতর্ক ছাত্রলীগে!

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৩৯; আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৮:০৩

  • বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ‘বিতর্কমুক্ত কমিটি’তে ফের বিতর্কিতরাই স্থান পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে অছাত্র ও গঠনতন্ত্রে উল্লিখিত বয়সের অধিক ব্যক্তিরাই শুধু নন, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মামলার আসামি, মাদককারবারিরাও স্থান পেয়েছে। নতুন পদ পাওয়া ৮ থেকে ১০ নেতার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। তবে কমিটিতে বিতর্কিত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মামলার আসামি, মাদককারবারি অধিকাংশই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
    শোভন ও রাব্বানীকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর পদবঞ্চিত নেতারা পথে নেমেছিলেন কমিটি থেকে বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেওয়ার দাবিতে। সর্বশেষ, সেই কমিটিরই শূন্য পদগুলো পূরণ হলো বিতর্কিতদের দিয়ে।

জানা গেছে, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে সহসভাপতির পদ পাওয়া মিজানুর রহমান পিকুল দুই মামলার আসামি। ২০১৭ সালের ৬ আগস্টের ঘটনা। ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী তার স্বামী ও ছোট বোনকে নিয়ে পলাশী মোড়ের কাঁচাবাজারে মাছ কিনতে যান। বাজারে হাঁটার সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন উপ-পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান পিকুলের সঙ্গে ওই ছাত্রীর স্বামীর ধাক্কা লাগায় তাকে গালাগাল করেন পিকুল; তেড়ে আসেন মারধর করার জন্য। দুই বোন এর প্রতিবাদ করায় তাদের ওপরও চড়াও হন পিকুল। এর পর মোবাইল ফোনে সাঙ্গোপাঙ্গ ডেকে এনে ওই দুই বোনের শ্লীলতাহানি করা হয় এবং তার স্বামীকে বেদম মারপিট করে রক্তাক্ত করা হয়। পরদিন ৭ আগস্ট ভুক্তভোগী চকবাজার মডেল থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পিকুলকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পলাশীতে দোকান ভাঙচুর ও দোকান মালিককে মারধর করায় ভুক্তভোগী দোকান মালিক বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এতে ছাত্রলীগ নেতা পিকুলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়। পিকুলের বিরুদ্ধে এর আগেও চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও সাংবাদিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে বলে একাধিক সূত্রের খবর।


সহসভাপতি দেবাশীষ সিদ্ধার্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়েছিলেন। একই অভিযোগে তাকে ছাত্রলীগ থেকেও আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা সহসভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর ও হলের সামনের দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত শান্তা সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ার এলাকায় রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী দাসকে মারধর করেন। এ ঘটনায় জিয়াসমিন শান্তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন ফাল্গুনী দাস। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ছাত্রলীগ নেত্রী ফরিদা পারভীনকে সহসভাপতি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মারধর ও হলের দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে একাধিক দৈনিকে প্রতিবেদনও হয়েছিল। কমিটিতে সদ্য সহসভাপতির পদ পাওয়া সুব্রত হালদার বাপ্পির বিরুদ্ধে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের সংঘবদ্ধ চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার একটি ছিনতাই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এমন তথ্য পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। যা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।

দপ্তর সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি। বর্তমানে তার বয়স ৩৪ বছর। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রেও ৫ এর ক উপধারায় বলা হয়েছে- অনূর্ধ্ব ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশের কোনো বিশ^বিদ্যালয় বা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা ছাত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হতে পারেন। ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনির এসএসসির মার্কশিটে জন্মতারিখ দেওয়া রয়েছে ২২ জুন ১৯৮৭ সাল। সেই হিসাবে তার বয়স ৩৩ বছর ৭ মাস।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন রহমান। যিনি বিশ^বিদ্যালয়ের জাসদ ছাত্রলীগের গবেষণা ও প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাকে দেওয়া হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া ঢাবির সাত কলেজ আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে ছাত্রী উত্ত্যক্ত ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আছে। আল আমিনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল রাতে ছাত্রলীগের বৈশাখী কনসার্টে হামলা করার অভিযোগ রয়েছে।

বিশ^বিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানীর বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ আছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো এবং হলে চাঁদাবাজি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বিতর্কিতদের বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, যতগুলো অভিযোগ এসেছে এগুলো সঠিক নয়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, সেগুলোর মীমাংসা করা হবে। একটি চক্র আছে যারা এসব মিথ্যা অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য কমিটিকে বিতর্কিত করা। আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে এ কমিটি করেছি।

২০১৯ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শোভন ও রাব্বানীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে এক নম্বর সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হন। তারা ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর বিভিন্ন অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে ৩২ নেতাকে অব্যাহতি দেন। এর দীর্ঘদিন পর গত রবিবার শূন্যপদে ৬৮ নেতাকে পদায়ন করা হয়েছে।

 



বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top